সিরিয়ার বেহাল অর্থনীতি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

siriya12102024_4857

প্রায় ১৪ বছর ধরে গৃহযুদ্ধের ফলে সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক দিক থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তাদের গোটা বিশ্বের সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।

২০১১ সালে সিরিয়ার অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। ওই বছরই বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা তৎপরতা বাড়ায়। পুরোদস্তুর গহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মধ্যে অর্থনীতির নিরিখে সিরিয়া ছিল ৬৮তম স্থানে। প্যারাগুয়ে ও স্লোভেনিয়ার সঙ্গে তুলনীয় ছিল তাদের জিডিপির পরিমাণ।

কিন্তু গত বছর তারা ছিল ১২৯তম স্থানে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে, তাদের অর্থনীতি এখন ৯০০ কোটি ডলারের। এখন চাদ ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে তাদের তুলনা চলে। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, দেশ থেকে ৪৮ লাখ মানুষের চলে যাওয়ার ফলে তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গরিব দেশ বলে পরিচিত।

জাতিসংঘের শাখা সংগঠন ওসিএইচএ’র মতে, দেশের ৭০ লাখ মানুষ এখন গৃহহীন। তাছাড়া দীর্ঘস্থায়ী এই সংঘাতের ফলে দেশের পরিকাঠামোর অবস্থাও খুব খারাপ। বিদ্যুৎ, পরিবহন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল। প্রচুর শহরে ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে।

See also  আমরা বসে ললিপপ খাব না: বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা

অন্যদিকে, গৃহযুদ্ধের ফলে সিরিয়ার পাউন্ডের মূল্য কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতাও পাল্লা দিয়ে কমেছে। গতবছর সিরিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল মারাত্মক। গত জুনে সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ(এসসিপিআর) জানিয়েছে, তার আগের বছরের তুলনায় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স ছিল দ্বিগুণ। তাদের রিপোর্ট বলছে, সিরিয়ার অর্ধেক মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম জিনিসও কিনতে পারছে না।

সিরিয়ার অর্থনীতির দুই স্তম্ভ হলো, তেল ও কৃষি। গৃহযুদ্ধের ফলে তাতে ধাক্কা লাগে। ২০১০ সালে তেল রপ্তানি করে সরকারের রাজস্বের এক চতুর্থাংশ অর্থ আসতো। কৃষি থেকেও সমপরিমাণ অর্থ আসতো।

কিন্তু আসাদের কাছ থেকে বিদ্রোহীরা, আইএস ও কুর্দিশ বাহিনী তেলের খনির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সরকারও বিদেশে তেল রপ্তানি করতে পারে না। আসাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় তেলের উৎপাদন ২০ হাজার ব্যারেলে নেমে আসে। সিরিয়া পুরোপুরি ইরান থেকে আমদানি করা জিনিসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

কত তাড়াতাড়ি হাল ফিরবে?

এই প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে,সিরিয়ায় কারা এবার ক্ষমতায় থাকবে, তার উপর। তাদের শহরগুলোকে গড়ে তুলতে হবে, পরিকাঠামো ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি ও তেলের ক্ষেত্রকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ২০১১ সালের জিডিপিতে পৌঁছাতে সিরিয়ার অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে। তবে এরপর যদি রাজনৈতিক অস্তিরতা দেখা দেয়, তাহলে সিরিয়ার অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

See also  সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের অত্যাচারের অবসান হয়েছে: বিশেষজ্ঞ

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে দামেস্ক দখল করেছে বিদ্রোহীরা। তারা এখন নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

এই সংগঠনকে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। পশ্চিমা ও আরব দেশগুলি মনে করছে এইচটিএসের সিরিয়া শাসনের অর্থ হলো, আসাদকে সরিয়ে কট্টরপন্থি শাসনের সূচনা হওয়
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রবীণ বিশ্লেষক ডিল্যানি সাইমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, সিরিয়ার উপর খুবই কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। সেই দেশ যখন দাঁড়াতে চাইছে, তখন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার অর্থ, তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে দেওয়া।

এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা সিরিয়াকে সাহায্য করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না।

এদিকে, রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের যতটা সম্ভব সাহায্য করতে পারে। আসাদের শাসন থেকে স্বাধীন, সার্বভৌম শাসনে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করবে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ায় ওয়াশিংটনের জড়িয়ে পড়া উচিত হবে না। বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন এইচটিএসকে জঙ্গি সংগঠনের তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করেছে।

অন্যদিকে, ইইউয়ের মুখপাত্র ব্রাসেলসে সোমবার বলেছেন, এইচটিএস কী বলছে, সেটা বড় কথা নয়। তারা কী করছে, সেটাই ইইউয়ের কাছে বড় বিষয়।

See also  গাজায় ময়দা বিতরণ লাইন-আবাসিক এলাকায় হামলা, নিহত ৫০

এইচটিএস নেতা মোহামেদ আল-জোলানি সোমবার আসাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কথা বলেছেন।

সোমবার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও দুইটি বাণিজ্যিক ব্যাংক খুলবে। কর্মীদের অফিসে আসতে বলা হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান মুদ্রাই বহাল থাকবে।

তেল মন্ত্রণালয় তাদের সব কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলেছে। বলা হয়েছে, তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।

জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার রোববার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, তারা সিরিয়ার মানুষের পাশে থাকবেন। রিসেপশন সেন্টারে খাবার, পানি, জ্বালানি, তাবু ও কম্বল দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *