সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘আপগ্রেড’ চায় বিএনপি

bn1292024_433556

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আপগ্রেড’ চায় বিএনপি। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে দলের নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এ কথা বলেন।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

মঈন খান বলেন, ‘‘আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই তাহলে কিন্তু আমরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়; আমরা কম্পিউটার এআই আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে সেটা অ্যাবসুলেটলি অ্যাকুরেট হবে।

‘‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে। এই বিষয় (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছে, এটা আপগ্রেড হবে।”

See also  গণতন্ত্র হত্যা করেছে বলেই আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন: মির্জা ফখরুল

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মঈন খান বিগত সরকারের আমলে আরপিও’র সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিল, তা বাতিল, নির্বাচনি পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি; গণমাধ্যমের নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ তারা সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘লেভেল প্ল্যানিং ফিল্ড তৈরি জন্য যাতে সত্যিকার ভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেন, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।

‘‘প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।”

‘সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য ৩/৪ মাসই যথেষ্ট’

See also  হয়তো আগামী বছরই রাজনৈতিক সরকার আসবে: শিক্ষা উপদেষ্টা

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি এগুলো প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি; আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।”

‘‘একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া আমরা এটা বুঝি নাই কী এক্সারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, তালিকা ঘোষণার সময়ে এটাও ঘোষণা করা হয় যে, কারো নাম যুক্ত না হলে তাহলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন, কারো অভিযোগ থাকে যে, বেঁচে নাই, বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায় না- এরকম কারো নাম তালিকায় থাকলে তা কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেলো এরপর নির্বাচনি প্রস্তুতি শিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এতো বেশি সময় লাগার কথা না। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সাথে বসেছি অনেকের সাথে কথা বলেছি। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি, সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয় প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন নতুন ভোটার সংযোজন কী কী ভুলভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্ক্রুটনি করা, তারপরে নির্বাচন কাজ অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।

See also  মানিকগঞ্জে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

‘‘সরকারের আরো সংস্কার প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩/৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।”

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই ’

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘কেয়ার টেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে  এটাই ছিল সবচাইতে বড় বাধা একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার।

‘‘ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ার টেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।”

‘যারা অপকর্মে যুক্ত ছিল তাদের বাদ দিতে হবে’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় না থাকে সেই প্রস্তাব আমরা করেছি।

See also  আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

‘‘কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকছে, তার নির্বাচনি কোনো স্ট্যাক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে আগে যুক্ত ছিল বা থাকতে পারে তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদের নিযুক্ত করা, যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না সেটা আমরা বলেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *